খুলনা, বাংলাদেশ | ১০ পৌষ, ১৪৩১ | ২৫ ডিসেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  চাঁদপুরে জাহাজে ৭ জনকে হত্যা: আসামি ইরফান ৭ দিনের রিমান্ডে

জরাজীর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে চলছে দিঘলিয়া ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্রের কার্যক্রম

একরামুল হোসেন লিপু

জরাজীর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে চলছে দিঘলিয়া ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের কার্যক্রম। ভবনটি ধসে পড়ার মারাত্মক আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। ভবনের অধিকাংশ কক্ষের ছাদের ঢালাই ধসে পড়ে রড বের হয়ে গেছে। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দায়িত্ব পালন করছেন কেন্দ্রটিতে কর্মরত এফ ডব্লিউ ভি ও অন্যান্যরা। খুলনা স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরকে চিঠি দিয়ে বিষয়টি অবহিত করা হয়েছে। অন্যদিকে গুরুত্বপূর্ণ সেবা প্রদানকারী এ কেন্দ্রটিতে জনবল সংকটের কারণে কাঙ্খিত সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে এলাকাবাসী।

পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র সূত্রে জানা যায়, ১৯৮২ সালে ৩৭ শতক জায়গার উপর দিঘলিয়া উপজেলার দিঘলিয়া ঈদগাহ সংলগ্ন ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রটি নির্মিত হয়। নির্মাণের পর দীর্ঘ ৪ দশকেরও বেশি সময় অতিবাহিত হয়েছে। এ সময়ের মধ্যে কেন্দ্রের ভবনটি মাত্র তিনবার সংস্কার করা হলেও সেটির গুণগত মান ছিল খুবই খারাপ। ভবনের অধিকাংশ কক্ষের ছাদের ঢালাই ধসে পড়ে রড বের হয়ে গেছে। ছাদের বিভিন্ন স্থানে ফাটল দেখা দিয়েছে। ভবনের প্লাস্টারও খসে খসে পড়ছে। কেন্দ্রের ওটি রুমটিও জরাজীর্ণ এবং ঝুঁকিপূর্ণ । ঝুঁকি নিয়ে প্রসূতি মায়েদের ডেলিভারি করাতে হচ্ছে এফ ডব্লিউ ভি ‘ কে।

প্রতিদিন ৪০/৫০ জন রোগী স্বাস্থ্যও ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রটিতে সেবা নিতে আসলেও ওষুধের অপর্যাপ্ততা, মেডিকেল অফিসার এবং উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার কর্মরত না থাকার কারণে তারা কাঙ্খিত চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। দীর্ঘদিন ধরে এ দু’টি পদ শূন্য রয়েছে। ফার্মাসিস্টের পদটিও শূন্য রয়েছে দীর্ঘদিন থেকে। দুইজন এফ ডব্লিউ ভি ‘র পদ থাকলে কর্মরত রয়েছেন একজন। এফ ডব্লিউ সি ‘র পদটি দীর্ঘদিন ধরে শুন্য। স্বাস্থ্য কেন্দ্রটিতে পানির কোন সুব্যবস্থা নেই। আবাসিক ভবনের অবস্থাও জরাজীর্ণ। নেই কোন টিউবওয়েল।

৭ টি পদের বিপরীতে বর্তমানে একজন এফ ডব্লিউ ভি, একজন পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শক এবং একজন অফিস সহকারী দিয়ে চলছে কেন্দ্রটির কার্যক্রম।
সেবা নিতে আসা রোগীর স্বজন রুমিছা বেগম বলেন, এখানে সেবার মান ভালো। কিন্তু এখানে দালান ফাঁটে গেছে, রড বেরোই গেছে, ভয় করে। আজ আমার দেবরের ছেলের ডেলিভারি হয়েছে এই অবস্থায়। আতঙ্কের ভিতর ছিলাম।

স্থানীয় ইউপি সদস্য মোঃ নাজমুল ইসলাম জানান, এলাকার মানুষের চিকিৎসার একমাত্র ভরসাস্থল ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্রটি দীর্ঘদিন ধরে জরাজীর্ণ এবং ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে।

স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রটিতে কর্মরত এফ ডব্লিউ ভি লক্ষ্মী দাস খুলনা গেজেটকে বলেন, “খুবই ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আমরা স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করছি। আমাদের ভবনটি খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। আমরা ঝুঁকি নিয়েই সেবা দিয়ে যাচ্ছি, ঝুঁকি নিয়ে ডেলিভারি করছি। আমাদের ওটি রুমটাও ঝুঁকিপূর্ণ। যে কোনো সময় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি উনারা বলেছেন ব্যবস্থা নিবে”।

দিঘলিয়া ইউনিয়ন পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শক জিএম রিয়াজুল ইসলাম বলেন, “এখানে আমরা সবাই সর্বোচ্চ সেবা দেওয়ার চেষ্টা করি। কিন্তু আমাদের যে ভবন, আমরা যেখানে বসে সেবাটা দিব, সেই ভবনটা জরাজীর্ণ হয়ে গেছে, সেবা প্রধানের অযোগ্য হয়ে গেছে। আমার বসার রুমটার ছাদ ভেঙ্গে গেছে। রুমে বসতে পারি না, বাইরে বসি। একদিন হঠাৎ আমার টেবিলের উপর ছাদ ভাঙ্গা এসে পড়ে। তারপর থেকে বাইরে বসি। ৮২ সালে ভবনটি নির্মিত হয়েছে কয়েকবার সংস্কার হয়েছে। কিন্তু কাজের গুণগত মান ছিল নিম্নমানের। ভবনের প্লাস্টার খসে পড়ছে, রড বের হয়ে মরিচা ধরেছে। সংস্কার করলে এটা স্থায়ী হবে না। নতুন ভবন প্রয়োজন। আমাদের অন্যান্য ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলির মতো মডেল দোতলা ভবন করলে সেটা স্থায়িত্ব হবে। ভবনের আসবাবপত্রগুলো পুরাতন হয়ে গেছে”।

দিঘলিয়া ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের এফ ডব্লিউসি পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও দিঘলিয়া ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ হায়দার আলী মোড়ল বলেন, “ভবনটি খুবই জরাজীর্ণ এবং ঝুঁকিপূর্ণ। আমি বহুবার বিষয়টি কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছি। উপজেলা সমন্বয় কমিটির মিটিংয়ে উত্থাপন করেছি। ১৯৮২ সালে ভবনটি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে নির্মিত হলেও তখন এটি বাস্তবায়ন করেছিল গণপূর্ত অধিদপ্তর”।

উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা অফিসার পলাশ কুমার বিশ্বাস বলেন, “এটি একটি মডেল ও অত্যন্ত জনবান্ধব একটা স্বাস্থ্য কেন্দ্র। কেন্দ্রটিতে প্রতি মাসে প্রায় ৫-১০ জন গর্ভবতী মা’কে সামাজিক প্রসব সেবা দেওয়া হয়। এছাড়া প্রসব পূর্ব সেবা ও গর্ভকালীন সেবা দেওয়া হয় ১০০ জন মা’কে।
পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতিভিত্তক সেবা প্রদান করা হয়। সাধারণ রোগী, শিশু রোগীকেও সেবা প্রদান করা হয়। ভবনটি জরাজীর্ণ অবস্থায় আছে। আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছি, চিঠি দিয়ে জানিয়েছি। তারা আমাদেরকে আশ্বস্ত করেছেন খুব শীঘ্রই সংস্কার করে দিবে। এছাড়া আমরাও তাদেরকে চিঠি দিয়ে বলেছি ভবনটি পরিত্যক্ত ঘোষণার মতো অবস্থা হলে পরিত্যক্ত ঘোষণা করতে”।

 

খুলনা গেজেট/লিপু/এইচ




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!